ভূমিকা
প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন উদযাপন করেন। এই দিনটি আনন্দ, আলো এবং বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিন্তু আদৌ কি যীশুর জন্ম এই দিনে হয়েছিল? বাইবেল এবং ঐতিহাসিক প্রমাণ অন্য কিছু বলছে। এই প্রবন্ধে আমরা সেই ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচন করব।
বাইবেলের সূত্র
লূক ২:৮-এ বলা হয়েছে, যীশুর জন্মের সময় রাখালরা রাতে মাঠে তাদের পশুদের পাহারা দিচ্ছিল। শীতকালে জুদেয়ার আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ও ভেজা থাকে, তখন রাখালরা সাধারণত বাইরে থাকতেন না।
এছাড়াও, বাইবেলে বলা আছে যে যীশুর জন্মের সময় একটি আদমশুমারির জন্য মেরি এবং যোসেফ নাজারেথ থেকে বেথলেহেমে গিয়েছিলেন। ঠান্ডার সময় এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন হতো। ফলে অনুমান করা যায়, এটি গ্রীষ্ম বা শরৎকালে ঘটেছিল।
প্রাথমিক খ্রিস্টান বিশ্বাস
প্রথম এবং দ্বিতীয় শতকের খ্রিস্টানরা যীশুর জন্মদিন পালন করতেন না। শুধু তাঁর পুনরুত্থানকেই (ইস্টার) প্রধান উৎসব হিসেবে পালন করা হতো। তৃতীয় শতকে কিছু খ্রিস্টান পণ্ডিত ২৫শে ডিসেম্বর তারিখটি প্রস্তাব করেন, তবে এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়।
ক্লেমেন্ট এবং ওরিজেন এর মতো ধর্মগুরু জন্মদিন পালনকে পাপীদের রীতি বলে অভিহিত করেছিলেন।
রোমান উৎসবের প্রভাব
২৫শে ডিসেম্বর আগে থেকেই রোমান সাম্রাজ্যে উৎসবের দিন ছিল। এই দিনে ‘সোল ইনভিক্টাস‘ নামে সূর্যদেবের জন্মোৎসব পালিত হতো, যা শীতকালীন সূর্যদয় উপলক্ষে উদযাপিত হতো। একই সময়ে ‘স্যাটারনালিয়া‘ নামক উৎসব পালিত হতো যেখানে উপহার দেওয়া ও আনন্দ চলত।
খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়ার সময় চার্চ এই জনপ্রিয় দিনটিকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে গ্রহণ করে, যাতে রোমানরা সহজে নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে পারে।
ধর্মীয় গণনা ও যুক্তি
অনেক খ্রিস্টান বিশ্বাস করতেন যীশুর গর্ভধারণ ও মৃত্যু ২৫শে মার্চে ঘটেছিল। সেই অনুযায়ী, নয় মাস পরে তাঁর জন্ম ২৫শে ডিসেম্বর হবে—এই বিশ্বাসও এই তারিখকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
আধুনিক গবেষণা ও সিদ্ধান্ত
আজকের ইতিহাসবিদ ও বাইবেল পণ্ডিতদের মতে, যীশুর প্রকৃত জন্মতারিখ ২৫শে ডিসেম্বর নয়। তাঁরা ধারণা করেন যীশুর জন্ম বসন্ত (মার্চ-এপ্রিল) বা শরৎকাল (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) নাগাদ হয়েছে।
উপসংহার
২৫শে ডিসেম্বর যীশুর প্রকৃত জন্মদিন নয়, বরং এটি একটি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে গৃহীত দিন। ‘গ্লোরিজ অফ ইন্ডিয়া‘-র মতো বইয়ে এই সত্য উদঘাটন করা সময়ের দাবি, যাতে ইতিহাসের প্রকৃত চিত্র জনসাধারণের সামনে আনা যায়।