Glories of India

স্বর্ণযুগের ভারত: ৪৮০০ বছর ধরে বিশ্বের সর্বাধিক ধনী সভ্যতা

ভূমিকা: ভারতের গোপন সোনালী ইতিহাস

ইতিহাস বহু সময়ে বিজয়ীদের কলমে লেখা হয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসও সেইরকমই বিকৃত হয়েছে বহুবার। কিন্তু যদি আপনাকে বলা হয় যে ভারত ছিল ৪৮০০ বছর ধরে বিশ্বের সর্বাধিক ধনী দেশ, তাহলে কি আপনি বিশ্বাস করবেন?

আসুন, আমরা সেই ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে আবার সামনে আনি।


ভারত: সম্পদের ভাণ্ডার

প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত ভারত ছিল বৈভবের প্রতীক। গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিস এবং রোমান ঐতিহাসিকরা ভারতের সোনালি সমৃদ্ধির কথা রচনায় তুলে ধরেছেন। চীনা ভিক্ষু হিউয়েন সাং ভারতের বৈভব ও উন্নয়নের সাক্ষ্য রেখেছেন।

ভারতের ছিল:

  • বিশ্বজোড়া বাণিজ্যপথ, যা রোম, চীন, মিশর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
  • সমৃদ্ধ কৃষি ব্যবস্থা, আধুনিক সেচ পদ্ধতির সাথে।
  • অফুরন্ত খনিজ সম্পদসোনা, হীরা, মণিমাণিক্য।
  • বিখ্যাত বস্ত্রশিল্প, যার সিল্ক ও কটন বিশ্বের রাজবাড়িতেও ব্যবহৃত হত।

১৮শ শতকের আগে পর্যন্ত বিশ্বের সমস্ত হীরার উৎস ছিল ভারত।

আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানের ধন

ভারতের আসল শক্তি ছিল তার জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতাবৈদিক সাহিত্যে যেমন রিগবেদ, উপনিষদ, পুরাণে মহাজাগতিক ব্যাখ্যা থেকে মানব আত্মার রহস্য আলোচনা হয়েছে।

তক্ষশীলা ও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তখন বিশ্বের প্রথম বিদ্যাপীঠ, যেখানে পড়াশোনা করতে আসত পারস্য, গ্রিস, চীন থেকে ছাত্ররা।

শিক্ষার বিষয় ছিল:

  • গণিত (শূন্য, দশমিক, বীজগণিত)
  • জ্যোতির্বিজ্ঞান (গ্রহের গতি, গ্রহণ)
  • আয়ুর্বেদ ও অস্ত্রোপচার
  • নীতিশাস্ত্র, দর্শন ও যুক্তি

এই জ্ঞানই ভারতের আসল রত্ন।

বিদেশি আক্রমণকারীরা কেন ভারত চেয়েছিল?

কারণ একটাই: ভারত ছিল অপরিসীম ধনসম্পদের আধার।

যাঁরা ভারত আক্রমণ করেছিলেন:

  • পারস্য (সাইরাস দ্য গ্রেট)
  • গ্রিস (আলেকজান্ডার)
  • কুশান ও শক
  • মুঘল (বাবর, আকবর, আওরঙ্গজেব)
  • ইউরোপীয়রা (পর্তুগিজ, ফরাসি, ডাচ, ব্রিটিশ)

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসার অজুহাতে এলো, কিন্তু শাসন শুরু করল। এবং ধীরে ধীরে ভারত থেকে প্রায় $৪৫ ট্রিলিয়ন সমপরিমাণ সম্পদ লুঠ করা হল।

ব্রিটিশ শাসন: একটি নির্ধারিত লুটতরাজ

১৭০০ সালে ভারতের বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশ ছিল প্রায় ২৪%

১৯৪৭ সালে তা কমে দাঁড়াল ৩%-এরও কম

ব্রিটিশরা:

  • ভারতের কাপড়শিল্প ধ্বংস করল।
  • কৃষকদের উপর ভারী কর চাপাল।
  • মন্দির, রাজপ্রাসাদ, গ্রন্থাগার লুঠ করল।
  • ভারতীয় শিক্ষাকে ধ্বংস করে ইউরোপীয় ধাঁচে তৈরি করল।

তারা শুধু অর্থ নয়, ভারতের আত্মবিশ্বাসও কেড়ে নিল।

ভারতের বিশ্বদানে গৌরব

ভারত যা কিছু বিশ্বকে উপহার দিয়েছে:

  • গণিত: শূন্য, দশমিক, বীজগণিত
  • চিকিৎসা: আয়ুর্বেদ, অস্ত্রোপচার
  • ভাষা: সংস্কৃত—বিশ্বের সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক ভাষা
  • আধ্যাত্মিকতা: যোগ, ধ্যান, পুনর্জন্ম
  • গণতন্ত্র: বৈশালী ও অন্যান্য প্রাচীন গণরাজ্য

ভারত শুধু ধনীই ছিল না, ছিল জ্ঞান বিতরণকারী একটি মহান সভ্যতা।

এই সত্য গোপন করা হল কেন?

ঔপনিবেশিক শক্তিরা ভারতকে “অসভ্য, কুসংস্কারাচ্ছন্ন” প্রমাণ করতে চেয়েছিল, যাতে তাদের শাসন বৈধ মনে হয়।

তারা ছড়িয়ে দিল:

  • আর্য অনুপ্রবেশ তত্ত্ব
  • ডারউইনবাদ ও বিবর্তন তত্ত্ব
  • বিগ ব্যাং-এর মত অতীত ঘোলা তত্ত্ব
  • সংস্কৃতকে অপ্রচলিত ও অপ্রয়োজনীয় বলে প্রচার

এ সবই মনের উপনিবেশবাদ, যা আজও অব্যাহত।

একটি নতুন জাগরণের ডাক

আজ আবার ভারত উঠছে, কিন্তু এই উত্থান হওয়া উচিত সত্য ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে।

আমাদের করণীয়:

  • সত্য ইতিহাস তুলে ধরা
  • ভারতীয় বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদ, যোগ ইত্যাদিকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা
  • সত্যিকারের নায়কদের সম্মান দেওয়া
  • ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানের সংরক্ষণ
  • ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা

উপসংহার: গৌরবের পুনর্জাগরণ

ভারত ছিল ঋষি, বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকদের দেশ। ৪৮০০ বছর ধরে ভারত মানব সভ্যতার নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন সময় এসেছে সেই গৌরব আবার ফিরিয়ে আনার।

ভারতকে এখনই জাগতে হবে।