Glories of India

গাজওয়া-এ-হিন্দ: ভারতকে দখলের সেই বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র কি আবার শুরু হয়েছে?

ভূমিকা: ইতিহাসের ছায়ায় এক সমসাময়িক সংকট

গাজওয়া-এ-হিন্দ”—এটি শুধু একটি ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী নয়, এটি আজ চরমপন্থীদের একটি রণনীতি। ইসলামিক হাদীস অনুসারে, এটি এমন এক যুদ্ধ যেখানে মুসলমান বাহিনী হিন্দ (ভারত) জয় করে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। আজ এই ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্ত্র করে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।

যদিও অধিকাংশ মুসলিম পণ্ডিত এই হাদীসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এবং ইসলামি জিহাদি সংগঠনগুলো এটিকে ব্যবহার করছে ভারতের বিরুদ্ধে ‘পবিত্র যুদ্ধ’ চালানোর নামে।

গাজওয়া-এ-হিন্দ কী?

গাজওয়া’ মানে হচ্ছে এমন যুদ্ধ যেখানে স্বয়ং নবী অংশ নিয়েছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন। গাজওয়া-এ-হিন্দঅর্থাৎ হিন্দুস্তান জয় করার যুদ্ধকে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী ধর্মীয় নির্দেশ বলে মনে করে।

এই ধারণা লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মহম্মদ, তালিবান এবং আইএসআইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর দ্বারা প্রচারিত এবং ব্যবহৃত হয়।

যে হাদীসটির উপর ভিত্তি করে এই বিশ্বাস গড়ে উঠেছে

আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ্‌ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন—একটি হলো যারা হিন্দ জয় করবে এবং অপরটি যারা ঈসা ইবনে মরিয়ম (যীশু)-এর সঙ্গে দামেস্কে থাকবে।”
সুনান আল-নাসাঈ

এই হাদীস নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, জঙ্গি সংগঠনগুলো এটিকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে সন্ত্রাসবাদে অনুপ্রাণিত করছে।

পাকিস্তান ও গাজওয়া-এ-হিন্দের সম্পর্ক

পাকিস্তান গঠনের সময় থেকেই তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভারতবিরোধী। কাশ্মীর দখল এবং ভারতের ইসলামিককরণ তাদের মূল লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে।

  • হাফিজ সাঈদ, লস্কর-ই-তৈয়বার প্রতিষ্ঠাতা, একাধিকবার গাজওয়া-এ-হিন্দের প্রসঙ্গে ‘পবিত্র জিহাদ’ ঘোষণা করেছেন।
  • পাকিস্তানের কিছু মাদ্রাসায় এখনো ভারতের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের কথা বলে পড়ানো হয়।
  • আইএসআই বহু বার গোপনে এই আদর্শকে সমর্থন জানিয়েছে।

সন্ত্রাসবাদীরা কীভাবে ব্যবহার করছে এই ধারণা?

এই মতাদর্শকে ব্যবহার করে বহু তরুণকে ব্রেনওয়াশ করা হয়েছে:

  • পুলওয়ামা উরি হামলার সময় এই হাদীস প্রচারিত হয়েছিল।
  • ISIS-K একে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভবিষ্যদ্বাণীকে কেন্দ্র করে ভিডিও, পোস্টার ও বক্তৃতা ছড়ানো হয়েছে।

আসল লক্ষ্য: ভারতীয় সভ্যতার বিনাশ

গাজওয়া-এ-হিন্দ কেবল যুদ্ধ নয়, এটি এক আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। এর মাধ্যমে:

  • ভারতের বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতা ধ্বংস করার চেষ্টা,
  • হিন্দু-বৌদ্ধ ঐতিহ্য মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র,
  • ধর্মান্তরণ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, জমি জিহাদ, সাইবার জিহাদ ইত্যাদির মাধ্যমে ভারতের কাঠামোকে দুর্বল করার পরিকল্পনা।

ভারতের ইতিহাস: আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে হাজার বছরের প্রতিরোধ

মহম্মদ গজনি থেকে শুরু করে গৌরি, বাবর, ইংরেজ—ভারত বহুবার আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কখনো দমে যায়নি। আজকের গাজওয়া-এ-হিন্দ হলো সেই পুরনো আগ্রাসনেরই আধুনিক রূপ।

রাজনীতি ও মিডিয়ার নীরবতা: এক বিপজ্জনক সমর্পণ

বিষয়টি সামনে আনলেই কেউ কেউ ‘ইসলামোফোবিয়া’ বলে দেগে দেন। কিন্তু এই হীন চুপটি করা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ। যেমন ইউরোপ হিটলারের বইকে অবহেলা করেছিল, তেমনিভাবে এই হুমকিকেও অবহেলা করা আত্মঘাতী হতে পারে।

আমাদের করণীয় কী?

ভারতকে এই আদর্শিক হামলার বিরুদ্ধে প্রস্তুত হতে হবে:

  1. শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারইতিহাসে আক্রমণকারীদের গৌরবায়ন বন্ধ করতে হবে।
  2. আইনি পদক্ষেপযেসব সংগঠন এই মতবাদ প্রচার করে, তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
  3. সাইবার পর্যবেক্ষণঅনলাইন চরমপন্থা রোধে কড়া নজরদারি।
  4. সংস্কৃতি চর্চাভারতের প্রাচীন গৌরব পুনর্জাগরিত করতে হবে।
  5. মধ্যপন্থী মুসলিমদের সমর্থনযারা শান্তির পক্ষে, তাদের পাশে থাকতে হবে।

উপসংহার: ভারত চিরকালীন, অপরাজেয়

ভারত শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, এটি একটি ১০,০০০ বছরের পুরনো সভ্যতা। হাজার ষড়যন্ত্রেও এই আলো নিভবে না। গাজওয়া-এ-হিন্দের মতো কাল্পনিক আগ্রাসনের ছায়া ভারতকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। বরং ভারত আবার জেগে উঠবে—সচেতন, ঐক্যবদ্ধ ও অপরাজেয় হয়ে।

🔥 স্লোগান:

হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী—একটাই বার্তা, ভারত কখনো আর কোনো আক্রমণকারীর দাস হবে না, না অস্ত্রের সামনে, না আদর্শের কাছে।”