Glories of India

তক্ষশীলা: যখন জ্ঞানই ছিল ঈশ্বরের পূর্বসূরী!

ধর্মের জন্মের আগেই জ্বলেছিল জ্ঞানের আলো

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়—সংস্কৃত নাম তক্ষশিলাবিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য। এর ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত পৌঁছে যায়, আবার অনেক ভারতীয় ঐতিহ্য মতে এর স্থাপনা রামায়ণ যুগে হয়।

এই সময়:

  • বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেননি,
  • মহাবীর স্বামী প্রচার শুরু করেননি,
  • বাইবেলের লেখা শুরু হয়নি,
  • ইসলাম অনেক দূরের ভবিষ্যৎ ছিল,
  • আর সংগঠিত হিন্দুধর্মও তখনো বিকশিত হয়নি।

অর্থাৎ, তক্ষশীলা এমন এক সময়ে ছিল যখন পৃথিবীতে ধর্মই ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এক মহাজ্ঞানের তীর্থভূমি

তক্ষশীলা ছিল এমন এক শিক্ষাকেন্দ্র যেখানে পড়ানো হতো:

  • বেদ ও দর্শন
  • গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান
  • আয়ুর্বেদ ও শল্যচিকিৎসা
  • রাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতি
  • ভাষা ও ব্যাকরণ
  • সংগীত ও চিত্রকলা
  • যুদ্ধবিদ্যা ও কৌশল

চীন, বাবিল, গ্রিস, পারস্য থেকে বহু ছাত্র এখানে পড়তে আসত। ধর্ম বা জাতির কোনো বাধা ছিল না। জ্ঞান ছিল একমাত্র মানদণ্ড।

🧠 বিশ্বাস নয়, বুদ্ধিই ছিল মুখ্য

আজকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু তক্ষশীলায় ছিল বিশুদ্ধ প্রশ্ন, তর্ক, ও অভিজ্ঞতা

না ছিল ধর্মীয় প্রচার, না অন্ধ বিশ্বাস। ছিল যুক্তিভিত্তিক আলোচনা ও জীবনের সত্য সন্ধান।

👨‍🏫 যাঁরা ইতিহাসকে রচনা করেছিলেন

তক্ষশীলার গর্ব তার শিক্ষার্থী ও আচার্যগণ, যাঁরা ইতিহাসকে নতুন দিশা দিয়েছেন:

  • চাণক্য (কৌটিল্য)মউর্য সাম্রাজ্যের রূপকার, অর্থশাস্ত্র রচয়িতা।
  • পাণিনিবিশ্বের প্রথম ব্যাকরণবিদ, যাঁর সংস্কৃত ব্যাকরণ আজও অনবদ্য।
  • জীবকআয়ুর্বেদ ও শল্যচিকিৎসায় পারদর্শী, গৌতম বুদ্ধের রাজচিকিৎসক।

🔥 ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হলো কেন?

তক্ষশীলা যদি এতই মহান ছিল, তাহলে তা ইতিহাসের পাতায় কেন নেই?

কারণ, পশ্চিমা ঔপনিবেশিক ঐতিহাসিকেরা ভারতীয় গৌরবকে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করেছেন, যাতে পৃথিবী না জানে যে ভারত একসময় ছিল বিশ্বের জ্ঞানকেন্দ্র।

তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল যে ভারত গ্রীস-রোমের অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে।

🏹 শুধু তত্ত্ব নয়, প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা

তক্ষশীলার ছাত্ররা শুধু বই মুখস্থ করতেন না। তাঁরা শিখতেন:

  • কুমড়ো ও মৃতদেহে শল্যচিকিৎসা,
  • রাজনীতি ও কূটনীতির কৌশল,
  • অস্ত্রবিদ্যা ও যুদ্ধকৌশল,
  • সংগীত, নাট্য ও চিত্রকলার অনুশীলন।

এ ছিল ব্যবহারিক শিক্ষাসরাসরি জীবনভিত্তিক।

🌐 ভারত: চিরন্তন জ্ঞানের বাতিঘর

তক্ষশীলা দেখিয়েছে—জ্ঞান, মানবতা, ও আত্মানুসন্ধান ধর্মের আগেও ছিল।

গুরু-শিষ্য পরম্পরার ভিত্তি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। যেখানে ছাত্ররা শিক্ষকের সঙ্গে থেকে আচার, শৃঙ্খলা, এবং আত্মোন্নতি শিখত।

আজও তক্ষশীলার ধ্বংসাবশেষ (UNESCO World Heritage Site) যেন বলে—
ধর্ম আসার আগেই জ্ঞান ছিল, আর ভারত ছিল তার তীর্থভূমি।”

🧭 পশ্চিমা ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সময় এসেছে

তক্ষশীলাকে সঠিক মর্যাদা দিলে পশ্চিমা ইতিহাসের মিথ ভেঙে পড়ে।

ভারত যে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির জন্মস্থান—তা শুধু তত্ত্ব নয়, অপ্রতিরোধ্য সত্য

আজ প্রশ্ন উঠছে—যে নৈতিকতা ও দর্শন ধর্মে স্থান পেয়েছে, তা কি তক্ষশীলার শিক্ষারই বিবর্তন?

✍️ ভারতকে ফিরিয়ে আনতে হবে ‘বিশ্বগুরুর’ আসন

আজকের ভারত তার নিজের ইতিহাসকে ভুলে যাচ্ছে।

তক্ষশীলার মতো কেন্দ্রকে শুধু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ মনে করলে ভুল হবে।
এগুলো আমাদের অস্তিত্বের সাক্ষ্য

চলুন বিশ্বকে বলি—
ধর্মের জন্মের অনেক আগে ভারত জ্ঞানের দীপ জ্বালিয়েছিল।
তক্ষশীলা শুধু একটি স্থান নয়, এটি একটি চেতনা।