উপনিবেশিক ষড়যন্ত্রে সংস্কৃতের দমন
ব্রিটিশ শাসনকালে পরিকল্পিতভাবে সংস্কৃতকে হেয় করা হয়। ঔপনিবেশিক চিন্তাবিদ ম্যাক্স মুলার প্রভৃতি ভাষাতত্ত্ববিদরা “আর্য আক্রমণ তত্ত্ব” প্রচার করে ভারতীয়দের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। সংস্কৃতকে মৃত ঘোষণা করা হয়, যাতে ভারতীয় আত্মবিশ্বাস ধ্বংস হয়।
ভাষাবিজ্ঞানের প্রমাণ: সংস্কৃতের মাতৃত্ব
১৭৮৪ সালে স্যার উইলিয়াম জোন্স বলেছিলেন:
“সংস্কৃত ভাষার গঠন বিস্ময়কর – এটি গ্রীক ভাষার চেয়ে বেশি নিখুঁত, লাতিনের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ এবং উভয়ের চেয়ে বেশি পরিশীলিত।”
একটু মিল খুঁজে দেখুন:
ইংরেজি | লাতিন | গ্রীক | সংস্কৃত |
Mother | Mater | Mētēr | मातृ (মাতৃ) |
Brother | Frater | Phratēr | भ्रातृ (ভ্রাতৃ) |
Name | Nomen | Onoma | नाम (নাম) |
Three | Tres | Treis | त्रयः (ত্রয়ঃ) |
এসব শব্দের মিল শুধুমাত্র কাকতালীয় নয় – এগুলো প্রমাণ করে সংস্কৃত অনেক ভাষার জননী।
সংস্কৃত: বৈজ্ঞানিক ভাষা
সংস্কৃত শুধু সুন্দর নয় – এটি অসাধারণভাবে নিয়মবদ্ধ ও লজিক্যাল। এটি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) জন্য আদর্শ ভাষা হিসেবে বিবেচিত। NASA এর গবেষণাতেও সংস্কৃত গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রাচীন ব্যাকরণবিদ পাণিনি রচিত “অষ্টাধ্যায়ী” – একটি ২৫০০ বছরের পুরনো ব্যাকরণ গ্রন্থ – আজও ভাষাবিদদের বিস্মিত করে।
ধর্ম ও সংস্কৃত: এক বিস্তৃত প্রভাব
সংস্কৃত শুধুই হিন্দুধর্মের ভাষা নয় – এটি বৌদ্ধ, জৈন ও তিব্বতী ধর্মাচরণেরও ভাষা। কর্ম, ধর্ম, নির্বাণ, মন্ত্র – এসব শব্দ আজ গোটা পৃথিবীতে পরিচিত।
চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া – সর্বত্র সংস্কৃত মন্ত্র ও শব্দধারা সম্মান পায়।
লর্ড ম্যাকলে ও শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কৃতের অপসারণ
১৮৩৫ সালে লর্ড ম্যাকলে একটি নিন্দিত সিদ্ধান্তে বলেছিলেন:
“ইউরোপীয় গ্রন্থাগারের একটি তাক ভারত ও আরবের সমগ্র সাহিত্যের চেয়ে মূল্যবান।”
এই মন্তব্য শুধু ঔদ্ধত্য নয় – এটি ছিল ভারতীয় মানসিক দাসত্ব সৃষ্টির ষড়যন্ত্র।
সংস্কৃতের পুনর্জাগরণ আজকের দাবি
আজ আবার ভারত সংস্কৃতকে পুনরুজ্জীবিত করতে শুরু করেছে। গুজরাট, কর্ণাটকের স্কুলগুলোতে সংস্কৃত পড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তা পড়ানো হচ্ছে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও সংস্কৃত গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংস্কৃতকে জীবন্ত ও গর্বিত ভাষা হিসেবে ফিরিয়ে আনাই এখন জাতীয় কর্তব্য।
উপসংহার: ভারতীয় গর্ব, বিশ্বের উত্তরাধিকার
সংস্কৃত কোনও মৃত ভাষা নয় – এটি একটি চিরন্তন সম্পদ। এটি সেই মূল গাছ, যার শাখায় জন্মেছে আজকের বহু ভাষা।
সত্য উচ্চারণের সময় এসেছে:
সংস্কৃতই বিশ্বের ভাষার মা।